দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রয়াণ দিবসে 'বাঁকুড়ার গান্ধী বুড়ি' নামে খ্যাত বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীবালা গুহকে স্মরণ করলেন গ্রামের মানুষ। রবিবার ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ইন্দাসের আকুই গ্রামে তাঁর আবক্ষমূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। নারীশিক্ষার অগ্রপথিক ও বিশিষ্ট এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিচারণায় অংশ নেন উপস্থিত প্রায় সকলেই।
ইংরেজী ১৮৮৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী, বাংলা ১২৯৩ বঙ্গাব্দের ৫ ফাল্গুন আকুই গ্রামের রক্ষিত পরিবারে জন্ম ননীবালা দেবীর। বাবার নাম সৃষ্টিধর রক্ষিত। মাত্র ন'বছর বয়সে ঐ গ্রামেরই জগৎ দুর্লভ গুহের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত ঠিক তার দু'বছর পর ১১ বছর বয়সেই বিধবা হন তিনি। পরবর্ত্তী সময়ে তিনি নিজের কর্মদক্ষতার জেরে 'বাঁকুড়ার গান্ধীবুড়ি' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
জেলার বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী জগবন্ধু দত্তের সংস্পর্শে আসেন ও বিপ্লবীমন্ত্রে দীক্ষা নেন তিনি। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে বাঁকুড়ার অন্যতম মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে প্রথম সারীতে উঠে আসেন তিনি। একই সঙ্গে পিকেটিং, ট্যাক্স বন্ধ আন্দোলন সহ অন্যান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বিনা বিচারে বহুদিন বন্দী ছিলেন। নিজে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও গ্রামে নারী শিক্ষায় বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। নিজের বসতবাড়ি স্কুল তৈরীতে দান করেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই সেখানে গড়ে উঠেছে আকুই ননীবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরো পরে তাঁর বিশেষ উদ্যোগে এই গ্রামে পথচলা শুরু করে আকুই ননীবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদান স্বরুপ ভারত সরকার ১৯৭২ সালে ননীবালা গুহকে তাম্রপত্র সহ পেনশান দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৯০ সালের ১৭ এপ্রিল, বাংলা ১৩৯৭ এর ৪ বৈশাখ বাঁকুড়ার গান্ধীবুড়ি ননীবালা গুহের জীবনাবসান হয়। পরে সম্মিলীত গ্রামবাসী ও ইন্দাস পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগীতায় ২০১৬ সালের ২৮ আগষ্ট গ্রামে তাঁর আবক্ষমূর্তি স্থাপিত হয়।
এদিনের স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঙ্কজ কুমার মাজিলা, ডঃ নীহারেন্দু দত্ত, দিলীপ কুমার দাঁ, দুর্গাদাস চ্যাটার্জি, প্রলঙ্কর রক্ষিত, রাজেশ কুমার রক্ষিত, পিনাকী ঘোষ ,অনাদি পরামানিক, তুফান সাঁতরা প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পার্থসারথি দত্ত।